যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে দুই প্রধান প্রার্থীর তৃতীয় ও শেষ বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প আবারও জোর দিয়ে বললেন, তার আশঙ্কা এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে কারচুপি হতে যাচ্ছে। আর ইঙ্গিত দিলেন, এই নির্বাচনের ফল তার বিপক্ষে গেলে তিনি তা মেনে নেবেন না।
এ নিয়ে বিতর্কের সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেসের প্রশ্নে তিনি বললেন, নির্বাচনের ফলের দিকেই তাকিয়ে থাকবো। সঞ্চালক জোর দিয়ে জানতে চাইলে বললেন, ‘এ বিষয়ে সবাইকে রহস্যের মধ্যেই রাখতে চাই। ’
ভোটার তালিকায় লাখ লাখ ভোটার নিবন্ধন হয়েছে, যাদের নিবন্ধন হওয়ার কথা নয় এই দাবি করে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আসলে এই কারণে হিলারি ক্লিনটনকে নির্বাচন করার সুযোগটাই দেওয়া অনুচিত।
হিলারি অনেক মারাত্মক অপরাধে অপরাধী আর সে কারণেই তার প্রার্থী হওয়া উচিত নয়। এ পর্যায়ে তিনি হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির কথা টেনে আনেন।
হিলারির প্রার্থী হওয়া উচিত নয় এমন কথা ট্রাম্প এই প্রথম বললেন। উত্তরে হিলারি শুধু বললেন, ‘কী ভয়াবহ’।
হিলারি বলেন, “ডনাল্ড কোনও কিছু তার পক্ষে না গেলেই মনে করেন এখানে কারচুপি হয়েছে, তাকে ঠকানো হয়েছে। এফবিআই যখন ই-মেইল মুছে ফেলার ঘটনা তদন্ত করে আমার কোনও অপরাধ পায়নি। ট্রাম্প মনে করলেন এফবিআইকেও হাত করে নেওয়া হয়েছে। আইওয়া ককাসে যখন তিনি হারলেন, বললেন কারচুপি হয়েছে। উইসকনসিন প্রাইমারিতে যখন হারলেন, বললেন সেখানেও কারচুপি। ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতারণা নিয়ে আদালত যখন রায় দিলো, তিনি বললেন আদালতও হাত করে নেওয়া হয়েছে। এমনকি তার একটি টিভি প্রোগ্রাম এমি অ্যাওয়ার্ড না জেতার পর তিনি টুইটের পর টুইট করে গেছেন এমি অ্যাওয়ার্ডেও কারচুপি হচ্ছে।
“ওটা আমারই পাওয়ার কথা ছিলো,” প্রত্যুত্তরে বলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
হিলারি বলেন, হ্যাঁ ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনাটাই এমন। এটা বেশ মজার, তবে ঝামেলারও বটে। এইভাবে আমাদের গনতন্ত্র কাজ করে না। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ২৪০ বছরের ইতিহাস আমাদের। অনেক নির্বাচনের ফল আমাদের পছন্দ হয়নি, কিন্তু কখনোই মেনে না নেওয়ার কথা ভাবিনি। বিতর্কের মঞ্চে উঠে আমাদের সে প্রতিশ্রুতিই দিতে হয়।
হিলারি বলেন, আমরা যদি তার এই বক্তব্যের মানে খুঁজি তাহলে বুঝতে পারবো তিনি মূলত আমাদের গণতন্ত্রকেই হেয় করছেন। আর আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে আমাদের প্রধান দুটি দলের একজন প্রার্থী সে কাজটি করছেন।
বিতর্কে প্রথমেই উঠে আসে সুপ্রিম কোর্ট প্রসঙ্গ। সুপ্রিম কোর্টকে জনগণের পাশে থাকার কথা বললেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট একটি কেন্দ্রীয় বিষয়, এবং আদালতকে সাধারন মানুষের পাশে থাকতে হবে, ক্ষমতাধর কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে আদালত নয়।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ট্রাম্প টেনে আনলেন শিকাগোর প্রসঙ্গ। বললেন, এখানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পরেও সন্ত্রাস, সহিংসতা কমেনি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে শিকাগোর এই সহিংসতায় জড়িতরা পাশের ইন্ডিয়ানা থেকে অস্ত্র কিনে আনছেন, যেখানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রিত নয়।
গর্ভপাত ইস্যুতে ট্রাম্পের বক্তব্য মায়ের গর্ভ থেকে বাড়ন্ত শিশুকে বের করে আনা হয়। আর হিলারির কাছে জানতে চাওয়া হয় কেনো তিনি দেরিতে গর্ভপাত বন্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। উত্তরে হিলারি বলেন, এটি পুরোপুরি একজন মায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।
রাশিয়া প্রসঙ্গ আসলে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, পুতিনের সঙ্গে আমার কখনোই দেখা হয়নি। তবে ফ্যাক্ট চেক বলছে, তার মুখে প্রায়শই শোনা গেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা।
আর হিলারি ক্লিনটন ডনাল্ড ট্রাম্পকে পুতিনের পুতুল বলেই মন্তব্য করেন।
** করমর্দন ছাড়াই শেষ হলো তৃতীয় বিতর্ক
** পুতিনের ‘পতুল’ বলায় রেগে আগুন ট্রাম্প
** করমর্দন ছাড়া শুরু তৃতীয় বিতর্কও, এগিয়ে চলছে
** হিলারি-ট্রাম্পের তৃতীয় বিতর্ক শুরু হয়েছে
** মঞ্চ প্রস্তুত: শিংয়ে শিংয়ে জমবে লড়াই
বাংলাদেশ সময় ০৯৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এমএমকে